স্বদেশ ডেস্ক:
‘নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে’ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করায় বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের ১১টি ঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া জোয়ারের পানি তিন ফুট বেড়ে তলিয়ে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা। ফলে উপহারের ঘর হস্তান্তরের আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেগুলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো মেরামত শুরু হয়েছে। ভেঙে পড়া ঘর মেরামতে বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় সংস্কার কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারি বরাদ্দের পুরো টাকা দিয়ে কাজ না করা এবং উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি না থাকায় ওই ইউনিয়নে আশ্রয়ণের ৪০টি ঘর নির্মাণে ‘পুকুরচুরির’ ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানের কথা থাকলেও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ঘরগুলো নির্মাণ করেছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান তা অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন মাসুদ জানান, ঘর ভেঙে পড়ার পেছনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসকে দায়ী করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি। ইউএনও বলেন, ‘ঘর বরাদ্দ ও জায়গা নির্বাচন সম্পর্কে কিছু বলার এখতিয়ার আমার নেই। কারণ আমি এসেছি দুই মাস হলো। প্রথম দফার ঘর নির্মাণ সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সময়ে হয়েছে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের দিনে বাহেরচরের ৪০টি ঘরে কমপক্ষে তিন ফুট পানি উঠে তলিয়ে যায়। ওই দিনই চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন ঘর ভেঙে পড়েছে। ওখানকার দুটি ঘর পুরোপুরি ভেঙে গেছেঅ আর ৯টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘর ভেঙে পড়ার পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে নির্মাণ ত্রুটিতে নয়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঘর ভেঙে পড়েছে। এরপর ঘর মেরামতে বরাদ্দ আবেদন করা হয়। বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় সংস্কারকাজ শুরুতেও সময় নিতে হয়েছে।’
মেরামত কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, ‘মিস্ত্রিদের বলা হয়েছে উপকারভোগীরা যেমন চাইবে, সেভাবেই ঘরগুলো মেরামত করে দেবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘর পাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘বরাদ্দের তালিকায় নাম তুলতে আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান ঘর পাইয়ে দিয়েছেন তার আপন চাচাতো ভাইয়ের নাতি শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আ. ছালাম খানের ছেলে মো. রাকিবকে এবং সরকারি রেশন ভাতাপ্রাপ্ত ভোলা পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্য মিজানুর রহমানকে।’
তারা আরও বলেন, ‘আধাপাকা দোতলা ভবনের মালিক শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ ও চৌচালা ঘরের মালিক মৎস্য ব্যবসায়ী রফিককেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুটি ঘর দেওয়া হয়েছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ঘর বরাদ্দ বা নির্মাণের ক্ষেত্রে আমার কোনো হাত নেই। আমি একজন জনপ্রতিনিধি মাত্র। মূলত দলীয় কিছু নেতা ষড়যন্ত্রমূলক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।’